আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
তার আগে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ওয়াশিংটনে সংস্থাটির বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে।
৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সফররত আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের সঙ্গে ঋণ প্যাকেজ ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে এটা পেয়ে যাব।
ঋণের চতুর্থ কিস্তির শর্ত পর্যালোচনা করতে ক্রিস পাপার্জিওয়ের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের আইএমএফ প্রতিনিধিদল ২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসে। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি প্রতিনিধিদল অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রতিনিধিদল আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় থাকবে। এ সময় তারা অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ, এনবিআরসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবে। আগামী মার্চে প্রতিনিধিদল আবার ঢাকায় আসবে বলে জানা গেছে।
আইএমএফ মিশনের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানত রাজস্ব আহরণ, বাজেট ঘাটতি, ব্যাংক খাতের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদসহ অন্যান্য কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কৌশল সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। জবাবে আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে বর্তমান সরকার, ভবিষ্যতে এসব পদক্ষেপের সুফল পাবে বাংলাদেশ।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছি অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা পুরোপুরি না হলেও অনেকটা ফিরে এসেছে। বর্তমানে মুদ্রাবিনিময় হার আগের মতো ওঠানামা করে না। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে কিছুটা তারল্য সহায়তা লাগলেও ইসলামী ব্যাংক ভালোর দিকে ফিরে এসেছে। ইসলামী ব্যাংক বেসরকারি খাতের ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড়। খারাপ অবস্থায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলোও ভালো হয়ে আসবে। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো, রপ্তানিও কম নয়। মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সার্বিক আমদানি কিছুটা কম হলেও আগের চেয়ে বেড়েছে। এটা হয়তো আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। তার পর ঠিক হয়ে যাবে।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এমন পদক্ষেপ নেবে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। সার্বিকভাবে ভেবে-চিন্তে এমনভাবে কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে, যাতে সেগুলো আগামী সরকারও অব্যাহত রাখে। এসব বিষয়ে তারাও সম্মত হয়েছে। তারা যত টার্গেট দেবে সেগুলোর সব বাস্তবায়ন করা যাবে কি না সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা সহায়তা করবে।’
উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।
২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন এবং আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে। এখন চতুর্থ কিস্তিতে ১.১ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাক।