বুধবার

,

৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বিএনপির ওপর এ দেশের মানুষ প্রত্যাশা রাখে : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘যে দলের ৬০ লক্ষ নেতা-কর্মী গায়েবি মামলা ও অত্যাচারের শিকার হয়েছে, সেই দলের ওপর এ দেশের মানুষ প্রত্যাশা রাখে। তাই আমাদের প্রস্তুত করতে হবে মানুষের জন্য। নিজের কথা নয়, আমাদের দেশ ও মানুষের কথা ভাবতে হবে।’

মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লার ফান টাউন পার্ক মিলনায়তনে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ত বিষয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, তার দল জনগণের ভোটে আগামীতে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে জনগণের জন্য জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।

তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, ইচ্ছা হলো দেশের মানুষের কাছে একটি জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠন করতে চাই। যারা জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকবে, তাহলে দেশের সকল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবো পর্যায়ক্রমে।’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আগামীদিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তার দল কী করবে তার বর্ণনা হলো রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১-দফা। সংস্কার প্রস্তাব শুধু দলীয় কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, প্রতিটি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। দয়া করে এ ঘরে আবদ্ধ রাখবেন না। ৩১ দফায় কারও আপত্তি বা কোনো প্রস্তাবনা থাকলে সংস্কার কিংবা সংযোজন করা হবে।

তারেক রহমান বলেন, ‘যখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইতো না যে স্বৈরাচারের বিদায় হবে, আমরা সেই সময় এ দফা দিয়েছিলাম। সেটা প্রায় দুই বছর আগে। আমরা প্রথমে এটা ২৭ দফা দিয়েছিলাম, পরবর্তীতে ৩১ দফা হয়েছে। কারণ আমাদের সাথে অনেক গণতান্ত্রিক দল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন তাদের মতামত যুক্ত করা হয়েছে এখানে।’

বিতর্কিত কাজ থেকে নেতা-কর্মীদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দলের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কাজ করা যাবে না। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। স্বৈরাচারীরা দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। এখনো সময় আছে। আসুন আমরা দেশ ও মানুষের কাজে সময় ব্যয় করি। মানুষ এখন বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে।’

দেশ ও মানুষের জন্য জিয়া পরিবারের অবদানের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমার বাবা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে গিয়েই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে জীবন দিয়েছেন। আমার মা বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষের পক্ষে থাকার কারণে কীভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, তা আপনারা দেখেছেন। আমার ভাই আরাফাত রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের অত্যাচারে শহিদ হয়েছেন। বাংলাদেশের বহু বিএনপি নেতাকর্মীর পরিবারের কাহিনী আমার পরিবারের মতোই।’

তারেক রহমান বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে গত ১৫ বছরে পলাতক স্বৈরাচার সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। কীভাবে দেশকে দুর্নীতিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। কীভাবে অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। তারা দুর্নীতির ওপর টিকে থাকতে চেয়েছিল এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই দুর্নীতি থেকে যদি দেশকে রক্ষা করতে হয় তাহলে তা প্রাইমারি স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নকরণ করা হবে। শিক্ষার্থীকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করা হবে। আমরা চাচ্ছি প্রাইমারি লেভেল থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত প্রতিটি নাগরিক একজন দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। দেশের নাগরিকদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা দেশ-বিদেশে কোথাও গিয়ে না আটকে যায়। সারা বিশ্বেই যেন সে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় নিযুক্ত নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রশ্ন করেন। এ সময় তিনি এবং কর্মশালার প্রশিক্ষকরা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। দেশের যানজট একটি প্রধান সমস্যা এ সমস্যা মোকাবিলা করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহিদদের নামে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করা হবে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন।

সভা শেষে জেলা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় নেতাকর্মীরা আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত হবে না মর্মে অঙ্গীকার করেন।