দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পালে হাওয়া লেগেছে। ক্রেতারা আবার বাংলাদেশি পোশাকের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছেন। আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ভালো ক্রয়াদেশ পেয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। পোশাক মালিকরা বলেছেন ‘প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে। আশা করছি, আগামী মৌসুমগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১৫-২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।’
যদিও সাম্প্রতিক সময় বেতন না পাওয়ার অভিযোগ এনে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। এর মধ্যে সরকারও পােশাক মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সরকার শ্রমিকের বর্তমান মজুরি বৃদ্ধি করেছে। রপ্তানি আরও বাড়াতে এ খাতে নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারে কাছে নিশ্চিত হতে চান পোশাক শিল্পের মালিকরা।
তৈরি পোশাকশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, ক্রয়াদেশ নিয়ে এখন কোনো সমস্যা নেই। ফলে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হলে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। তা ছাড়া চীন থেকে স্থানান্তরিত ক্রয়াদেশের একটি অংশও পাচ্ছে বাংলাদেশের কারখানাগুলো। তবে বর্তমানে সবকিছু ছাপিয়ে শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা ও কারখানার নিরাপত্তা বড় দুশ্চিন্তার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে কয়েকজন উদ্যােক্তা জানান।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির সদস্য কারখানাগুলোর পক্ষে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমদানি প্রাপ্যতা (ইউডি) নেওয়া ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ হাজার ৭০ কোটি ডলারের ইউডি নেওয়া হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ডলারের ইউডি ইস্যু করা হয়। তার মধ্যে গত দুই মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর) ৪৯৭ কোটি ডলারের ইউডি ইস্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকরা বলেন, উৎপাদন সক্ষমতা পরিপূর্ণ হওয়ায় অনেক ক্রয়াদেশ ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। বর্তমানে বড় সমস্যা তৈরি পোশাকের দাম। দু-একটি ব্র্যান্ড ছাড়া সব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে কম দাম অফার করছে। একদিকে উৎপাদনের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে দাম কমছে। ফলে সংখ্যায় ক্রয়াদেশ বাড়লে রপ্তানি আয় সেই হারে বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণায় চীনা পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কথা বলেছেন ট্রাম্প। সেটি হলে চীন থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হবে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বাড়তি ক্রয়াদেশ পেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরানো শুরু করেছে বলে জানালেন একজন পোশাক রপ্তানিকারক। তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানায় পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী ক্রয়াদেশ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আমাদের শিল্পের বেশ কিছু বড় কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব কারখানার ক্রয়াদেশও আমাদের কারখানায় স্থানান্তরিত হয়েছে।’