শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মারা গেছেন।
স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসে নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। জিমি কার্টারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কার্টার সেন্টার। কার্টার গত কয়েক বছর ধরে ত্বকের ক্যানসার মেলানোমাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
জিমি কার্টারের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৯ জানুয়ারি জাতীয় শোক দিবসের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা কার্টারকে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শান্তির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন চীনসহ বিশ্ব নেতারা।
জিমি কার্টারই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি তার ১০০তম জন্মদিনে পৌঁছেছিলেন। গত অক্টোবর মাসে তাঁর ১০০তম জন্মদিন উদযাপিত হয়। তিনি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জর্জিয়ার প্লেইনসে তার বাড়িতে ‘হসপিস কেয়ার’-এ ছিলেন।
প্রথম জীবনে জিমি কার্টার ছিলেন একজন চীনাবাদাম বিক্রেতা। তিনি তার বাড়িতে চীনাবাদামের চাষ করতেন। পরবর্তী জীবনে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর জর্জিয়ার স্থানীয় এবং একজন ডেমোক্র্যাট হিসেবে ১৯৭৬ সালে রিপাবলিকান জেরাল্ড ফোর্ডকে পরাজিত করে আমেরিকার ৩৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জিমি কার্টার।
ডেমোক্র্যাট দল থেকে নির্বাচিত জিমি কার্টার ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটের মধ্যেই তাঁকে কাজ করতে হয়েছিল।
১৯৮০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে পরাজিত হয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়েন কার্টার। জনপ্রিয়তা হারিয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজের সুনাম পান জিমি কার্টার।
আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে নিরলস প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিসাধন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়।
এক বিবৃতিতে জিমি কার্টারের ছেলে চিপ কার্টার বলেন, ‘আমার বাবা একজন নায়ক ছিলেন; শুধু আমার কাছেই নন, যাঁরা শান্তি, মানবাধিকার ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন এমন সবার কাছেই।’
জিমি কার্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছিল। তাঁর শাসনকালেই ইরানে মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ জন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছিল। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই জিম্মি দশার অবসান হয়। অবশ্য ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কার্টারের ভূমিকা ছিল। এর মধ্য দিয়ে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্ভব হয়।
জিমি কার্টার চার সন্তান ও ১১ নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী রোজালিন ২০২৩ সালের নভেম্বরে মারা যান। ১৯৪৬ সালে রোজালিনকে বিয়ে করেন কার্টার।
