শুক্রবার

,

৩রা জানুয়ারি, ২০২৫

নাশকতার প্রমাণ ‘মেলেনি’, সচিবালয়ে আগুন ‘বিদ্যুতের স্পার্ক’ থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে দুর্বল বিদ্যুৎ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক স্পার্ককে চিহ্নিত করেছে এ ঘটনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বিস্ফোরক নাশকতার কোনো তথ্য মেলেনি।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি এ তথ্য জানান।

এর আগে বিকেলে তারা সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেন।

ব্রিফিংয়ে নাসিমুল গনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সবাই একমত হয়েছে, লুজ কালেকশনের কারণে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে আগুনের উৎপত্তি। এটি প্রাথমিক তদন্তের ফল। এখানে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ব্যাক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’

অনুসন্ধানে একাধিক দল কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল ছিল, দমকল বাহিনীর যারা ফায়ার হ্যান্ডেল করেন, তাদের এক্সপার্ট ছিল, সেনাবাহিনী থেকে তাদের বম্ব স্কোয়াড ছিল, তাদের বিশেষায়িত ডগ স্কোয়াডও কাজ করেছে। পুলিশের সিআইডিও কাজ করেছে।

নাসিমুল গনি বলেন, সবাই মিলে একত্রে একটি বিষয়ে একমত হয়েছি যে এটি একটি লুজ কানেকশনের কারণে বিদ্যুৎ থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়েছে। এটি আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত। এতে অন্য কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আমরা খুঁজে পাইনি।

বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী বলেন, এই আগুনের উৎপত্তি একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে ৭ মিনিট ধরে আস্তে আস্তে গরম হয়েছে। এরপর আগুন ধরেছে। সচিবালয়ের বিল্ডিংয়ের একটি টানেলের অ্যাফেক্টের কারণে আগুন পশ্চিম দিক থেকে গিয়ে পূর্ব দিকে বেড়িয়ে গিয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে এই কারণেই আগুন দুইদিকে দেখা গেছে।

সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রাসেল বলেন, যে কোনো ধরণের বিস্ফোরক ব্যবহার করে এখানে আগুন লাগানো হয়েছে কি-না এটা যাচাই করেছি। আমরা নমুনা পরীক্ষা করে বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাইনি।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, আমাদের অগ্নিনির্বাপক দল গতানুগতিক পদ্ধতিতে আগুন নেভানোর কাজে সক্রিয় ছিল। প্রতিটি ফ্লোরে চারটি করে কলাপসিবল গেইট ছিল। এ ছাড়া ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সঙ্গে রুমের পার্টিশন পাশাপাশি কাগজপত্রের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। আগুনের ডিটেক্টর সিস্টেম এবং কন্ট্রোল প্যানেলে ঘাটতি ছিল। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লেগেছে।

আগুনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ক্রাইম সিনের কারণে ভেতরে প্রবেশ সংরক্ষিত থাকায় পুরো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

গত বুধবার দিবাগত রাতে সচিবালয়ে সাত নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট টানা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুনে ভবনটির চারটি তলায় অবস্থিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে যায়।