বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশকে রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্য অপরিহার্য হলেও একটি মহল জাতিকে বিভক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের সমস্ত গণতন্ত্র প্রেমী মানুষ ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানাব, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বিভাজন সৃষ্টি করবেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ঐক্য।’
বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মিথ্যা মামলার শুনানিকালে আদালতে দেওয়া তাঁর জবানবন্দির ওপর রচিত ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
‘দ্যা প্যাট্রিয়ট’ প্রকাশনা সংস্থার ৩০০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মূল্য রাখা হয়েছে ২০০ টাকা।
আদালতে খালেদা জিয়া যেসব জবানবন্দি দিয়েছেন- তা গ্রন্থে রূপ দিতে নেপথ্যে বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান এবং সাংবাদিক শফিক রেহমান ও খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব সাংবাদিক মারুফ কামাল খানের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচিত সংসদ ও নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সংস্কারের বৈধতা আমরা দিতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যে সকল সংস্কার এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি- এর পেছনে যে শক্তিটা লাগবে সেটা হচ্ছে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট, নির্বাচিত সরকার। এটা ছাড়া সংস্কারকে কখনো লেজিটেমেসি দিতে পাবর না আমরা। এটা ফ্যাসিস্টরা পারবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব খুব শিগগিরই মুক্ত হবেন। কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি সব মামলা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন ইনশাল্লাহ।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের জনগণের, যুবকদের, স্বেচ্ছাসেবকদের, ছাত্রদের, মহিলাদের যে ত্যাগ কোনো মতেই বৃথা যাবে না। বৃথা যায়নি। আমরা ফ্যাসিবাদকে এ দেশে থেকে তাড়াতে পেরেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে আমরা কেন জানি নিজেদের মধ্যে পুরো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না। ঐক্যের জায়গাটাতে থাকতে পারছি না। কারণ, চারপাশে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য। অথচ কেউই বুঝতে চায় না যে ক্ষমতায় টিকে থাকা তখনই সম্ভব যখন ক্ষমতার পুরো প্রক্রিয়া সমাধান করা যাবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে প্রথম সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সংস্কার তো আমরাই শুরু করেছি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব প্রথম দেশের মূল সংস্কার করেছেন। তিনিই এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এনেছিলেন। দেশে একটা বদ্ধ অর্থনীতি ছিলো, সেখানে তথাকথিত ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে, সেখানে তিনি একটা মিশ্র বা মুক্ত অর্থনীতির মতবাদ নিয়ে এসেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন, সেই দর্শন ইটসেলফ সংস্কারের মূলকথা। একইসঙ্গে ১৯ দফা কর্মসূচি ছিল সংস্কারের বড় কর্মসূচি। আমাদের এগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে।’