দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিক সেক্রেটারির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন স্টারমার। এছাড়া টিউলিপ নিজে এক টুইটে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন।
ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারি, সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের মিডিয়ার খবর প্রকাশ হতে থাকে। এতে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন টিউলিপ সিদ্দিক। এসবের মুখে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন। তবে তিনি পদত্যাগ করলেও ভুল কিছু করেননি বলে দাবি করেন।
যদিও গেল সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘টিউলিপের ওপর তার পূর্ণ আস্থা আছে।’ তবে দুই মাসের মধ্যে সরকারের দ্বিতীয় কোনো মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা কিয়ার স্টারমারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
টিউলিপ এক্স হ্যান্ডেলে তার পদত্যাগের কথা জানান। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রের ছবিও পোস্ট করেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, অভিযোগ পর্যালোচনার পর ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি মন্ত্রী হিসেবে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টিউলিপকে লেখা স্টারমারের একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পাশাপাশি আমি এটাও স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্বাধীন উপদেষ্টা হিসেবে স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, তিনি মন্ত্রী হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন ও আর্থিক অনিয়মের কোনো অভিযোগের ঘটনা পাননি।’
তিনি মন্ত্রী থাকলে সরকার তার কাজে মনযোগ দিতে পারবেন না এমন কথা উল্লেখ করে টিউলিপ বলেছেন, ‘এ কারণে আমি আমার মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।
কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বেইদেনকস বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতা টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হতে থাকে।
এছাড়া অক্সফ্যাম এবং ট্র্যান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও সিদ্দিককে তার দুর্নীতি-বিরোধী ভূমিকা থেকে সরে আসার আহ্বান জানায়।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, পেনসনমন্ত্রী এমা রেনল্ডস টিউলিপ সিদ্দিকের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন।
২০১৫ সালে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন টিউলিপ সিদ্দিক। এরপর তিনি ২০১৭ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনেও নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে নতুন নির্বাচনী এলাকা হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট থেকে ৪৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে চতুর্থবার হাউস অফ কমন্সে আসন লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার গত বছর ৯ জুলাই টিউলিপ সিদ্দিককে তার মন্ত্রীসভায় সিটি মিনিস্টার পদে নিয়োগ করেন।