গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ‘বিশৃঙ্খল’ পরিস্থিতিকে সমর্থন করছে না বিএনপি। দলটি বলছে, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে নির্বাচন বিলম্বিত করাই এসব হামলার উদ্দেশ্য। নেতারা মনে করছেন, বিদ্যমান ঘটনা সামাল দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, এই বিশৃঙ্খলার দায় সরকার এড়াতে পারে না।
এমন বাস্তবতায় সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে বিএনপি।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ সারা দেশে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরে এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।
এটাকে নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। একটি দলের ইন্ধনে গত কয়েক দিনে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখন সরকারকেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। তবে এসব ঘটনায় কাউকে সরাসরি দোষারোপ করবে না বিএনপি। এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচিও দেওয়া হবে না। কিন্তু বিষয়টিকে যে তারা সমর্থন করে না, সেটি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘কোনো গণতান্ত্রিক দল এসব কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারে না। এ ঘটনা সামাল দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’
স্থায়ী কমিটি সূত্র জানায়, ‘বিএনপি এ ঘটনাকে এক ধরনের ফাঁদ হিসেবেও মনে করছে। তাই নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা-হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা কোনোভাবে জড়াবেন না। আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই নির্দেশনা দলের প্রতিটি নেতাকর্মী অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন।’
বৈঠকে বিএনপি নেতারা মত প্রকাশ করেন, গণ-অভ্যুত্থানের এত দিন পর দেশজুড়ে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে টার্গেট হচ্ছে বিএনপি ও নির্বাচন। একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ছাত্ররা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। উদ্দেশ্য, নির্বাচন প্রলম্বিত করা, যাতে দ্রুত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হয়। কারণ ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে সারা দেশে সংগঠনকে সুসংহত করতে যথেষ্ট সময় চায়। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে। এমন অবস্থায় নির্বাচন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির এক নেতা বলেন, একটি দেশে বিপ্লব, গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার পরপরই নানা ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এত দিন পরে এসে কেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটবে। এ ধরনের ঘটনা তো মাসের পর মাস চলতে পারে না। দেশ কি স্থিতিশীল হবে না?