বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব আয়োজন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের জনগণকে আশ্বস্ত করেছি যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনুযায়ী আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের জনগণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সংগত ও স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল, যেখানে প্রতিটি সাধারণ মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে।’
ড. ইউনূস আরো বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে গত ১৫ বছরে আমাদের জনগণ বিশেষ করে যুবসমাজ ক্রমাগত তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা সংকুচিত হতে দেখেছে। তারা রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয় ও নাগরিক অধিকারের অবমাননা প্রত্যক্ষ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণ একটি নৃশংস স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রায় দুই হাজার নিরীহ মানুষ, যাদের বেশির ভাগই তরুণ এবং ১১৮ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ তাদের ইতিহাসে এক নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব ছাত্রনেতা এই গণজাগরণে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে, তারা তাঁকে অনুরোধ করেছিল এই সংকটময় মুহূর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের জনগণের স্বার্থে এই দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হয়েছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার গ্রহণ করবে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সুশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিষয়গুলোই আমাদের পরিকল্পিত সংস্কারের মূল লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, যাতে জনগণের মালিকানা, জবাবদিহি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, এই কমিশনগুলো এরই মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে, যা বর্তমানে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করেছি। আমি নিজেই যার নেতৃত্ব দিচ্ছি এবং এতে ছয়টি কমিশনের প্রধানরা রয়েছেন। এই কমিশনগুলো যে সুপারিশগুলো জমা দিয়েছে, তা পর্যালোচনা এবং গ্রহণ করার জন্য এ কমিশন গঠন করা হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি আরো চারটি কমিশন গঠন করেছে, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম এবং নারী অধিকারসংক্রান্ত নীতিগত সুপারিশ দেওয়ার লক্ষ্যে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা যখন বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করছি, তখন আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে অবিচলভাবে কাজ চালিয়ে যাব, তারা নারী হোক কিংবা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হোক।’
অনুষ্ঠানে থাই প্রধানমন্ত্রী এবং সম্মেলনের চেয়ারপারসন পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, বিমসটেক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইন্দ্র মনি পান্ডে এবং বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
