দেশ ও দেশের বাইরে ট্রাম্প ও মাস্কবিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে লক্ষাধিক বিক্ষোভকারী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর মিত্র ইলন মাস্কবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ এখনো চলছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, স্থানীয় সময় রবিবার আমেরিকার অন্তত ১২ শতাধিক জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আমেরিকানদের অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর ‘আক্রমণ’ চালাচ্ছেন।
গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের উদ্যোগে আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও বেশ কয়েকটি দেশে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব বিক্ষোভে অংশ নেয় লাখ লাখ মানুষ। এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ!’। ‘হ্যান্ডস অফ!’ আন্দোলনকারীরা ‘ধনকুবেরদের ক্ষমতা দখলের অবসান চায়’।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটল, ফেডারেল ভবনগুলোর সামনে, কংগ্রেসনাল দপ্তর, সোশ্যাল সিকিউরিটি সদর দপ্তর, পার্ক ও সিটি হলগুলোর সামনে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিক্ষোভের আয়োজকরা বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি তারা আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে।’
এই আয়োজনের প্রচারপত্রে লেখা ছিল, ‘আমাদের গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ, চাকরি ছাঁটাই, গোপনীয়তার ওপর আক্রমণ অথবা আমাদের পরিষেবার ওপর আক্রমণের কারণে আপনি যেভাবেই সংঘবদ্ধ হোন না কেন—এই মুহূর্তটি আপনার জন্য। আমরা এই সংকটের বিরুদ্ধে একটি বিশাল, দৃশ্যমান, জাতীয় প্রত্যাখ্যান গড়ে তুলতে চাই।’
এই বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠনগুলোর অন্যতম ইন্ডিভিসিবলের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ছয় লাখ মানুষ এসব বিক্ষোভে যোগ দেবে জানিয়ে স্বাক্ষর করেছে। লন্ডন, প্যারিসের মতো বড় বড় শহরেও কিছু বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইন্ডিভিসিবলের পাশাপাশি আমেরিকার বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, নারী অধিকার গোষ্ঠী, শ্রমিক ইউনিয়ন ও এলজিবিটিকিউ প্লাস আন্দোলনকারীরা এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন তাঁদের দাবি তিনটি : ‘ধনকুবেরদের ক্ষমতা দখলের এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক দুর্নীতির অবসান; শ্রমজীবীরা নির্ভর করে এমন সরকারি স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স কর্মসূচি (মেডিকেইড), সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য কর্মসূচির জন্য ফেডারেল তহবিল হ্রাস বন্ধ করা এবং অভিবাসী, ট্রান্সজেন্ডার লোকজন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের ইতি ঘটানো।’
ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘হ্যান্ডস অফ!’ বিক্ষোভ চলাকালে আমেরিকার কংগ্রেসের অনেক প্রতিনিধি এসব সমাবেশে যোগ দেন।
তাঁদের অনেকেই মঞ্চে উঠে ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে কথা বলেন।
তাঁদের মধ্যে মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি জেমি রাসকিন বলেন, “মুসোলিনির রাজনীতি ও হার্বাট হুভারের অর্থনীতি নিয়ে আছেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট থাকলে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের (রাষ্ট্রের) প্রতিষ্ঠাতারা এমন একটি সংবিধান লিখেছিলেন যেখানে ‘আমরা স্বৈরশাসক’ দিয়ে শুরু হয়নি, প্রস্তাবনায় ‘আমরা জনগণ’ বলা হয়েছে।”
নগরীর ওয়াশিংটন স্মৃতিস্তম্ভে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশে রাসকিন আরো বলেন, ‘নৈতিক কোনো মানুষই অর্থনীতির পতন ঘটানো একজন স্বৈরশাসক চান না, যিনি সব কিছুর দাম জানেন, কিন্তু কোনো কিছুরই মূল্য বোঝেন না।’
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের হাতেই ট্রাম্প প্রশাসনের নিন্দা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন লোকজন প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য দেশটির বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীতে গিয়ে হাজির হয়। ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘হেই হো, ট্রাম্প গোটা গো’ স্লোগান দিতে থাকে।
এখানে অনেকের হাতেই বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এর একটিতে লেখা ছিল ‘আমাদের সংবিধান রক্ষা করো’, আরেকটিতে ‘আমাদের অধিকার থেকে হাত সরাও’। এই বিক্ষোভে মিনেসোটার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ইলহান ওমর বলেন, ‘আপনি যদি এমন একটি দেশ চান যা এখনো যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে, আমাদের তার জন্য লড়াই করতে হবে।’
লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারীরা প্রায় এক মাইল লম্বা মিছিল নিয়ে সিটি হলের দিকে যায়। এ সময় তারা স্লোগান দেয়, ‘জনগণকে ক্ষমতায়ন করো’; তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘শিক্ষা থেকে হাত সরাও’, ‘প্রতিরোধ করো, প্রতিরোধ করো’। এর পাশাপাশি বোস্টন, শিকাগো, নিউ ইয়র্কসহ আমেরিকার আরো অনেক শহরে ‘হ্যান্ডস অফ’ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন