বুধবার

,

১৬ই এপ্রিল, ২০২৫

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে রাজধানীসহ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। রঙিন পোশাকে, ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে, আনন্দ শোভাযাত্রা, জারি, সারি, লোকগান, লোকজ মেলা এবং বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সারাদেশ আজ নতুন বছরকে বরণ করেছে।

উৎসবের আমেজে নেচে-গেয়ে শেষ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। র‍্যালিজুড়ে ছিল বাঙালিয়ানা ও জুলাই বিপ্লবের ছাপ। ছোট থেকে বড়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, এমনকি বিদেশিরা শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে। জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে সবার চোখেমুখে ছিল বর্ষবরণের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের ছাপ, আর ছিল বিজয়ের আনন্দ।

সোমবার সকাল ৯টা ৬ মিনিটে শোভাযাত্রা শুরু হয়। এবারের বৈশাখের শোভাযাত্রায় নিজস্ব কৃষ্টি আর ঐতিহ্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ২৮ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।

দীর্ঘ ব্যানার ধরে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা সদরে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপিত হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীতে দুই সিটি করপোরেশনের বেশকিছু এলাকায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ বিভাগের গাজীপুর , নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ি জেলায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামের সব ক’টি জেলায় বিভিন্ন আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গান, কবিতা, নৃত্য, ঐতিহ্যের শোভাযাত্রাসহ লোকজ নানা অনুষঙ্গে, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বাংলা নববর্ষকে বর্ণিল আয়োজনে বরণ করে চট্টগ্রামবাসী। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে নগরীর বর্ষবরণের বিভিন্ন আয়োজনে যোগ দেয় সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রামে বর্ষবরণের বড় আসর বসে সিআরবির শিরিষতলায়।

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিসহ আরও বিভিন্নস্থানে বর্ণিল উৎসবের আয়োজন ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বের করা শোভাযাত্রায় আরও প্রাণময় হয়ে ওঠে চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখের আয়োজন।

পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করে। তিন দিনব্যাপী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু উৎসব, চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু উৎসব এবং মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের মধ্যে দিয়ে উদ্‌যাপিত হয় বর্ষবরণ উৎসব। বর্ষবরণ উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব আজ শুরু হয়েছে।

এছাড়াও চট্টগ্রামের কুমিল্লা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনীসহ সবকটি জেলায় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, কাবাডি খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ মেলা ও শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে বিপুল উৎসাহে আনন্দঘন পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপিত হয়।

রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের উপজেলায় নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত হয় বাংলা নববর্ষ উৎসব। বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ পৃথক পৃথক শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রাজশাহী শহরের পদ্মা নদীর পাড়ে রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ উৎসব।

জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগের নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাটে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপিত হয়।

বর্ণিল আয়োজন ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় রংপুরে আজ বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সারাদেশের মতো প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠে বিভাগীয় নগরী রংপুর। আনন্দ শোভাযাত্রা, লোকজ মেলা, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ইত্যাদি নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণ করা হয়। এছাড়াও দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ে বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বর্ষবরণ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও নগরীতে বরিশাল চারুকলা ও উদীচী শিল্পী-গোষ্ঠী পৃথক পৃথক আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। আনন্দ শোভাযাত্রায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিনের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন।

বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

খুলনা বিভাগের যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলা, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, নেত্রকোণা এবং শেরপুর জেলায় লোকজ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।