শনিবার

,

১৯শে এপ্রিল, ২০২৫

বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত পাকিস্তানের, বিপাকে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূল পর্বের টিকিট কেটেছে পাকিস্তান। নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে টানা চার ম্যাচের চারটিতে জিতেছে পাকিস্তানের মেয়েরা। লাহোরে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডকে ৭৮ রানে হারিয়ে সবার আগে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ফাতিমা সানার দল।

পাকিস্তান নিশ্চয় এই দিনের অপেক্ষায় ছিল! কারণ, মেয়েরা বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যাওয়ায় এবার যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে বেকায়দায় ফেলেছে পাকিস্তান। বলা যেতে পারে এটি ভারতকে পাকিস্তানের জবাবও।

২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে ভারত ছাড়া অংশগ্রহণকারী দেশ নিজেদের দলকে পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল। রোহিত-কোহলিদের পাকিস্তানে না পাঠানোর কারণ হিসেবে ভারত সরকার বারবার নিরাপত্তা-শঙ্কার কথা বলে এলেও আসল কারণ যে রাজনৈতিক বৈরিতা, সেটি না বললেও চলছে। শেষ পর্যন্ত ভারত ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) শর্ত মেনে নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন করেছিল।

চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান মূল আয়োজক হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় দল নিজেদের সব ম্যাচ খেলেছিল দুবাইয়ে। এমনকি বাবর-রিজওয়ান-আফ্রিদিদেরও রোহিত-কোহলিদের সঙ্গে দুবাইয়ে গিয়ে খেলে আসতে হয়েছিল। ভারত ফাইনালে ওঠায় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিও লাহোরের পরিবর্তে দুবাইয়ে হয়েছিল।

এবার পাকিস্তানের মেয়েরাও হাইব্রিড মডেলে ২০২৫ নারী বিশ্বকাপে নিজেদের সব ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলবে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হতে চলা মেয়েদের বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসরের মূল আয়োজক ভারত হলেও দুই বোর্ডের সেই চুক্তি অনুযায়ী এবার হারপ্রীত কৌর-স্মৃতি মান্ধানাদের দেশে ফাতিমা সানা-মুনিবা আলীরা খেলতে যাবেন না।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ভারত সরকার পাকিস্তানে দল পাঠাতে রাজি না হওয়ায় বেশ অসন্তুষ্ট ছিল পিসিবি। মহসিন নাকভির বোর্ড আইসিসিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, এবার তারা ভারতকে কোনো রকম ছাড় দেবে না।

ভেন্যু নিয়ে একমত হতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ভারত বা পাকিস্তানের কোনো একটি দল টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতো আইসিসি। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা শেষ পর্যন্ত হাইব্রিড মডেলকে সমাধান হিসেবে বেছে নিয়ে দুই বোর্ডের দ্বন্দ্ব মেটায়।

গত ডিসেম্বরে বিসিসিআই ও পিসিবির করা সেই চুক্তিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, যেহেতু চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ভারতীয় দল পাকিস্তানে যাবে না, তাই ২০২৭ সাল পর্যন্ত ভারতে হতে চলা কোনো বৈশ্বিক আসরে খেলতে পাকিস্তানের কোনো দল (নারী-পুরুষ উভয়ই) সে দেশে যাবে না। ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতে দুটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হবে। এর একটি ২০২৫ নারী বিশ্বকাপ, অন্যটি ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা অবশ্য যৌথ আয়োজক। তাই সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তান ছেলেদের দল নিজেদের সব ম্যাচ শ্রীলঙ্কায় খেলবে। কিন্তু ভারত ২০২৫ নারী বিশ্বকাপের একক আয়োজক হওয়ায় এবার পাকিস্তান মেয়েদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করতে হবে।

ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পাকিস্তানের মেয়েরা ২০২৫ নারী বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ায় বিসিসিআই এরই মধ্যে লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

কারণ, নিরপেক্ষ ভেন্যুতে পাকিস্তানের মেয়েদের ম্যাচ আয়োজন করতে হলে যাতায়াত, আবাসন–সুবিধা, নিরাপত্তাব্যবস্থা, সম্প্রচারসহ আরও অনেক কিছুতে বিসিসিআইকে বাড়তি খরচ করতে হবে। এসব নিয়ে পাকিস্তানের যেন কোনো অভিযোগ না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে বিসিসিআই প্রতিনিধিদের এখনই দৌড়ঝাঁপ শুরু করতে হবে।

ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, ভারতের পাঁচ ভেন্যুতে হবে ২০২৫ নারী বিশ্বকাপ। আগামী ২৬ অক্টোবর ফাইনাল হওয়ার কথা মুল্লানপুরের মহারাজা যাদবীন্দ্র সিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। কিন্তু পাকিস্তান যদি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল বা ফাইনালে ওঠে, তাহলে চুক্তি অনুযায়ী সেই ম্যাচ দুটিও ভারতের বাইরে, অর্থাৎ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হবে, যা নিশ্চিতভাবেই ভারতের জন্য বাড়তি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলা ৮ দলের সবাই রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে সবার সঙ্গে একবার করে মুখোমুখি হবে। ফলে নকআউট পর্বের আগেই ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হবে। সেই ম্যাচটিও দেশের বাইরে গিয়ে খেলে আসতে হবে।

বিসিসিআই কোনো কারণে এ চুক্তি না মানলে পিসিবি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের মামলা করতে পারবে।