বৃহস্পতিবার

,

২৪শে এপ্রিল, ২০২৫

ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। সোমবার ভ্যাটিকানের একটি ভিডিও বার্তায় তার মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে।

পোপের মৃত্যুতে বিশ্বনেতারা তাঁকে ‘সহমর্মিতার আলোকবর্তিকা’ আখ্যা দিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

ভ্যাটিকানের বিবৃতিতে জানানো হয়, কিছুক্ষণ আগে কার্ডিনাল ফারেল, দুঃখের সাথে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গভীর দুঃখের সাথে আমাদের পবিত্র পিতা ফ্রান্সিসের মৃত্যু ঘোষণা করছি।’

স্পেনের জাস্টিস মিনিস্টার ফেলিক্স বোলানোস সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে স্পেন তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে।

জানা গেছে, বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম ল্যাটিন আমেরিকান নেতা পোপ ফ্রান্সিস। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।

৮৮ বছর বয়সে সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা আর্জেন্টাইন ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এক ব্যতিক্রমী ধর্মীয় নেতা—যিনি প্রচলিত প্রথা ভেঙে ক্যাথলিক গির্জায় এক মানবিক ও সহানুভূতিশীল চেতনার বার্তা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথাগত বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রেখে তিনি চেষ্টা করেছিলেন গির্জাকে আরও জনমুখী, দরিদ্রপন্থী ও সহনশীল করে গড়ে তুলতে।

ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি জানায়, ‘জনতার পোপ’ নামে খ্যাত ফ্রান্সিস গির্জার গণ্ডির বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসতেন। লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে উঠে আসা প্রথম পোপ তিনি, যিনি নিজেকে সবসময় ‘গরিবদের পক্ষে’ একজন কণ্ঠস্বর বলে দাবি করতেন—হোক সে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার জনগোষ্ঠী কিংবা বাস্তুচ্যুত অভিবাসী।

২০১৩ সালের মার্চে নির্বাচিত হয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। সেই শুরুতেই বলেছিলেন, ‘আমি চাই, গরিবদের জন্য গির্জা।’ নাম রেখেছিলেন ‘ফ্রান্সিস’, ১৩শ শতকের দরিদ্রপন্থী সাধক সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসির নামে।

সাদামাটা পোশাক, নিজে ফোন করে খোঁজ নেওয়া, বন্দীদের পা ধুয়ে চুমু খাওয়া—তার নেতারূপ ছিল এক অনাড়ম্বর মানবিকতা। নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি বলতেন, এমনকি হুইলচেয়ারে চড়েও দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তিনি বারবার বলে গেছেন, অবসর নেওয়ার কথা কেবলমাত্র গুরুতর শারীরিক অক্ষমতার ক্ষেত্রেই বিবেচনা করা উচিত।

১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের ফ্লোরেস এলাকায় এক মধ্যবিত্ত ইতালিয়ান অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হোর্হে মারিও বেরগোলিও।

১৭ বছর বয়সে ধর্মীয় আত্মমগ্নতা শুরু হয়। যাজক হিসেবে অভিষেক ১৯৬৯ সালে, মাত্র চার বছর পর আর্জেন্টিনায় জেসুইটদের প্রধান হন। তখন দেশের সেনাশাসনের ভেতরে বিভক্তির মুখোমুখি হন।

এরপর হয় নির্বাসন, একাকিত্ব, আত্মসংকট। আবার উঠে দাঁড়িয়ে হয়ে উঠলেন বুয়েনস আইরেসের ‘চর এলাকার বিশপ’। পরে হয়েছিলেন এমন এক পোপ, যিনি শুধু গির্জার নয়—বিশ্ব বিবেকের প্রতীক হয়ে ওঠেন।