রবিবার

,

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪

আইএমএফ প্রতিনিধি দল আসছে ৪ ডিসেম্বর

নিউজ ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে আগামী ৪ ডিসেম্বর আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল।

 

তাদের সঙ্গে পর্যালোনা বৈঠকেই আনুষ্ঠানিকভাবে আরো তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে আইমএফের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

 

এই প্রতিনিধি দলটি তৃতীয় কিস্তির বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে তিন বিলিয়ন ডলার দেওয়া যায় কি না, সেই বাস্তবতা যাচাই করে প্রতিবেদন জমা দেবে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে।

 

আইএমএফ এর সঙ্গে পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তিতে থাকা বাংলাদেশ সবশেষ তৃতীয় কিস্তির অর্থ হাতে পায় গত জুন মাসে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফ এর এটি রুটিন ভিজিট। তারা আর্থিক বিভিন্ন বিষয় রিভিউ করবে। আমরা আরো তিন বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দেব।”

 

বর্তমান ঋণ প্যাকেজের আকার বাড়িয়ে বা নতুন করে তিন বিলিয়ন ডলার ছাড় করতে পারে আইএমএফ। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইবে বর্তমান ঋণ প্যাকেজের আকার বাড়িয়ে নিতে।

 

প্রতিনিধি দলের সফর শেষে আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ এর বোর্ড সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে সফররত কর্মকর্তারা তাদের প্রাথমিক মতামত জানিয়ে দেবে।

 

তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশে আসা আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এবারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন।

 

দশ সদস্যর প্রতিনিধি দলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

 

গত অগাস্টে গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, বৈদেশিক ‍মুদ্রার যোগান বাড়াতে আইএমএফ এর কাছে আরো তিন বিলিয়ন ডলার চাইবে সরকার।

 

বিষয়টি নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে আইএমএফ এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। সবশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তারাষ্ট্রে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আইএমএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ঋণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

 

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা তখন বলেছিলেন, এটি ‘নতুন বাংলাদেশ’। আইএমএফ বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

 

ঋণের চতুর্থ কিস্তি পেতে সবশেষ দুটি শর্ত বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ খেলাপি শ্রেণিকরণ করার সময় কমিয়ে ৯০ দিন করা হয়েছে গত বুধবার।

 

এর আগে প্রতিদিন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়ার টুল রেপো সপ্তাহে একদিন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়া অন্যান্য সব শর্ত পরিপালন করতে পারায় তৃতীয় কিস্তির ছাড়ের সময়ে বাংলাদেশকে ‘ফ্রন্ট লোড’ এর মাধ্যমে ঋণ কিস্তির অতিরিক্ত ছাড় করেছিল আইএমএফ।

 

ঋণের চতুর্থ কিস্তি পেতে অন্যান্য শর্তের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে বাংলাদেশকে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে ২৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৮ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়।

 

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি। এ পর্যন্ত ঋণের প্রায় ২৩১ কোটি ডলার বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে।

 

ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের নিট হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মত বিষয় রয়েছে এর মধ্যে।