শাহজালাল বিমানবন্দরসহ আরো দুটি বন্দরে নির্মাণ প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকী, সাবেক সচিব মহিবুল হকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এসব মামলা করা হয়। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।’
দুদক মহাপরিচালক জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহিবুল হক, সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান, অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আলম, পরিচালক লুৎফুল্লাহ মাজেদ, কমিউনিকেশন-নেভিগেশন অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স-এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক আফরোজা নাসরিন সুলতানা ও সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পরিকল্পনা) একেএম মনজুর আহমেদ পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিগত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও আত্মসাৎ করেছেন।
একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইন্সটলেশন অব রাডার উইথ সিএনএস-এটিএম প্রকল্পের রাডার নির্মাণ কাজে অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে সম্পৃক্ত করা হয়। এই প্রকল্পে থ্যালেস এলএএস ফ্রান্স এসএএস নামে একটি কোম্পানি রাডার বসানোর কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আলম, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারিক সিদ্দিকীর ক্ষমতার প্রভাবে সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মুহিবুল হক, সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকারকে প্রভাবিত করে জি টু জি ভিত্তিতে ফ্রান্সের কোম্পানি থালেস এলএএস-এর সঙ্গে চুক্তি করে কার্যাদেশ দেন।
এ কোম্পানির সঙ্গে অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কো-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজে সম্পৃক্ত করা হয় এবং এটি স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। এ প্রকল্পের জন্য ৭৩০ কোটি টাকা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, থালেস কোম্পানিটি মূলত রাডার নির্মাণের কাজ করে, তারা কোনো সিভিল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
প্রকল্পটিতে কন্ট্রোল টাওয়ার বিল্ডিং নির্মাণে সুনির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন না থাকা সত্ত্বেও ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরার তথ্য পাওয়া যায়। এই কাজে পিপিআর-২০০৮ সহ ক্রয় প্রক্রিয়ার বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে, উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান না করে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন জি টু জি দরপত্র প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশে ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড মেকানিক্যাল কাজের সঙ্গে সিভিল কাজ একীভূত করে অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। এ প্রকল্প থেকেই ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসামিরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।