ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বঘোষিত অনলাইন বক্তব্যকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বুধবার রাতে। এরপর ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
সারাদেশেও ছাত্র-জনতার ক্রোধের আগুন জ্বলতে দেখা যায়। তারা খুলনায় এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ‘শেখবাড়ি’। বরিশালে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন।
একইভাবে এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ি। বরিশাল নগরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়। ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আগুন দেয় ভোলা সদরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে।
সারাদেশের সরকারি কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মীয়মাণ দুটি হলসহ মোট চারটি হলে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম থাকা ফলকগুলো ভেঙে নতুন নাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এবং নগরের জামাল খান এলাকায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি তুলে ফেলা হয়েছে। শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে রংপুরেও।
বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার পর থেকেই ছাত্র-জনতার ঢল নামে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে। গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করে বাড়িটি। লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেয় অনেকে। কেউ কেউ বাড়ির দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করে। জানালার গ্রিল, কাঠ ও ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় কাউকে কাউকে। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা। এর আগে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন শেখ মুজিবুর রহমানের এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল।
মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকটি বুলডোজার-ক্রেন সেখানে পৌঁছে। এরপর ভেঙে ফেলা শুরু হয়। এর মধ্যেই আগুন দেওয়া হয় ধানমণ্ডি ৫/এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় বুধবার। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকে, যারা গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’ পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’
এর আগেই কয়েকজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফেসবুকে ‘ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। একটি ফটোকার্ডও শেয়ার করেন তাঁরা। তাতে বলা হয়, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’
খুলনায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ‘শেখবাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। রাত ৯টার দিকে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনে আবারও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্র-জনতা বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগে পাশাপাশি বুলডোজার দিয়ে ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে।
কুষ্টিয়ায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ি। একটি বুলডোজার নিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও সীমানাপ্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
নগরীর বগুড়া রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনে বুলডোজার নিয়ে হামলা চালিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গভীর রাত পর্যন্ত ভাঙচুর চালায় তারা।
ভোলা সদরের গাজীপুর রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাড়িটিতে রাত পৌনে ১টার দিকে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।