সোমবার

,

১০ই মার্চ, ২০২৫

নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমেরিকা ছাড়াই শক্তিশালী হচ্ছে ন্যাটো

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপ একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকা-ইউক্রেন চুক্তি না হওয়ায় ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনের নিরাপত্তায় জোটবদ্ধ হয়েছে। এতে আমেরিকাকে ছাড়াই ইউরোপ সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে। কারণ ন্যাটোর মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত আমেরিকার নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। প্রায় ৮০ বছর ধরে জোটটি মহাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। এক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক অগ্রাধিকার, ব্যয় ভাগাভাগির দাবি ও আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের ফলে আমেরিকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে আরো আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা ভাবছে, সামরিক বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ও বিকল্প নিরাপত্তা কৌশল খুঁজছে। কারণ ঐতিহ্যগত ট্রান্সআটলান্টিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আর আগের মতো নির্ভরযোগ্য নাও থাকতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার মিত্রসুলভ আচরণ সন্দেহ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে ন্যাটো মিত্রদের রক্ষা করার বিষয়ে ‘যদি তারা অর্থ না দেয়’ তবে সাহায্য না করার ইঙ্গিত ইউরোপীয় নেতাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে আমেরিকা এখনো নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা অংশীদার রয়েছে কিনা। কারণ ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাতময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

আমেরিকা ছাড়া ন্যাটো এখনো শক্তিশালী বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। জোটের ৩১টি দেশের সমর্থন এবং এর ১০ লাখের বেশি সেনাসদস্যসহ আধুনিক অস্ত্র রয়েছে। ন্যাটোর পর্যাপ্ত অর্থ ও প্রযুক্তি রয়েছে, যা দিয়ে এটি আমেরিকার সাহায্য ছাড়াও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।

ন্যাটোর বাজেটে আমেরিকা ও জার্মানি প্রায় ১৬ শতাংশ করে অবদান রাখে। আর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অবদান যথাক্রমে ১১ শতাংশ ১০ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রয়োজনে ইউরোপ আমেরিকার অবদানের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ইউরোপের নির্বাহী পরিচালক বেন শ্রিয়ার বলেন, ‘যদি ইউরোপীয় দেশগুলো একত্র হয়ে সঠিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে, তবে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রচলিত ও পারমাণবিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। ইউরোপের নিজেকে রক্ষা করার মতো সম্পদ রয়েছে। আসল প্রশ্ন হলো তারা তা করতে প্রস্তুত কিনা। ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমেরিকাই ন্যাটোকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।

শীতল যুদ্ধের সময় ইউরোপে অবস্থানরত আমেরিকার সেনারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণ ঠেকাতে সহায়তা করেছিল। গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগ পর্যন্ত আমেরিকাই ইউক্রেনকে সহায়তার নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় সেই কয়েক দশকের ট্রান্স-আটলান্টিক সংহতি হয়তো শেষ হয়ে গেছে।

কিছু ইউরোপীয় নেতা এখনই আমেরিকাকে শত্রু হিসেবে দেখার কথা ভাবছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, আমেরিকা ছাড়া ন্যাটো আরো শক্তিশালী হতে পারে। কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো তখন নিজেদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়াবে।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘এ পরিবর্তন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এবং ইউরোপ সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী তা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।’