বুধবার

,

১২ই মার্চ, ২০২৫

রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনকে সামলানো কঠিন : ট্রাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে গিয়ে তাঁর কাছে রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনকে সামলানো কঠিন মনে হয়েছে।

শুক্রবার ওভাল অফিসে তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখছে আমেরিকা। কিয়েভের চেয়ে মস্কোকে সামলানো তুলনামূলক সহজ হতে পারে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্ক আরোপের কথা জোরালোভাবে বিবেচনা করছেন।

ট্রাম্প এরই মধ্যে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন। মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার বিবিসিকে জানিয়েছে, কিছু স্যাটেলাইট চিত্রে ইউক্রেনের প্রবেশাধিকার সাময়িক স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার এক সপ্তাহ পর এই পদক্ষেপ নিল ওয়াশিংটন। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে অসম্মান করেছেন।

পরে ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্যবিনিময় বন্ধের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া।

রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি ছিল মূলত এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেছেন, তিনি নতুন শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন, কারণ রাশিয়া এখন যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের ওপর পুরোপুরি আক্রমণ করছে।

তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুর পাল্টে ট্রাম্প বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অন্য যে কারো মতোই আচরণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি (পুতিন) আগের চেয়ে ইউক্রেনে আরো বেশি আঘাত করছেন। আমার মনে হয়, তাঁর অবস্থানে থাকা যে কেউ এটাই করবেন।’

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে চান, তবে ইউক্রেন সম্পর্কে তিনি একই কথা বলতে পারছেন না। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানতে চাই, তারা (ইউক্রেন) মীমাংসা করতে চায় কি না। তবে তারা এটা সত্যিই চায় কি না, আমি জানি না।’

আমেরিকা চায়, জেলেনস্কি ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তি করবেন। একই সঙ্গে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুতই একটি শান্তি সমঝোতায় পৌঁছাবেন। কিন্তু জেলেনস্কি নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান। এ জন্য চুক্তির শর্তে বিষয়টি রাখতে চাপ দিচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়ে পরেও আলোচনা করা যাবে। এটা খুবই সহজ একটি অংশ।’

এদিকে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার বলেছে, আমেরিকার স্যাটেলাইটের কিছু উচ্চমানের চিত্রে ইউক্রেনের প্রবেশাধিকার সাময়িক স্থগিত করেছে আমেরিকা।

যুদ্ধের সময় স্যাটেলাইট চিত্র গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে সেনাবাহিনী। আমেরিকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সারের সঙ্গে বিভিন্ন সরকার ও কম্পানিকে স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহের চুক্তি রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো গ্লোবাল এনহ্যান্সড জিওআইএনটি ডেলিভার (জিইডিজি) কর্মসূচি, যা ব্যবহারকারীদের মার্কিন সরকারের সংগৃহীত উচ্চমানের স্যাটেলাইট চিত্রে প্রবেশাধিকার দেয়।

ম্যাক্সার বলেছে, আমেরিকা সরকার জিইজিডিতে ইউক্রেনীয় অ্যাকাউন্ট সাময়িক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি গ্রাহক এসব তথ্য কিভাবে ব্যবহার করবে এবং বিনিময় করবে, সে বিষয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল জিওস্পাশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি নিশ্চিত করেছে যে প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের শর্ত মেনে নিতে জেলেনস্কির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেই আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জেলেনস্কির ও তাঁর দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সৌদি আরবে যাবেন। শুক্রবার জেলেনস্কি বলেন, তিনি আশা করেন যে, আলোচনা অর্থপূর্ণ হবে। তাঁর দেশ অতিসত্বর শান্তির জন্য প্রস্তুত। প্রতিদিন রাশিয়া (ইউক্রেনে) হামলা চালাচ্ছে। এটা প্রমাণ করে যে, রাশিয়াকে শান্তির জন্য বাধ্য করতে হবে।

এদিকে ইউক্রেনের দোনেত্স্ক, খারকিভসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চালানো রুশ হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনের ছোড়া ৩১টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।